শাস্ত্রীয় ক্রিপ্টোগ্রাফি
শাস্ত্রীয় ক্রিপ্টোগ্রাফি হলো ক্রিপ্টোগ্রাফির প্রাচীনতম রূপ। এখানে আমরা দেখবো কীভাবে মানুষ হাজার বছর ধরে গোপন বার্তা পাঠানোর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করেছে।
ক্রিপ্টোগ্রাফি কী?
ক্রিপ্টোগ্রাফি (Cryptography) শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ “kryptos” (গোপন) এবং “graphein” (লেখা) থেকে। সহজ ভাষায়, ক্রিপ্টোগ্রাফি হলো তথ্য গোপন রাখার বিজ্ঞান।
মূল ধারণাসমূহ
- প্লেইনটেক্সট (Plaintext): মূল বার্তা যা আমরা গোপন করতে চাই
- সাইফারটেক্সট (Ciphertext): এনক্রিপ্ট করা বার্তা
- এনক্রিপশন (Encryption): প্লেইনটেক্সটকে সাইফারটেক্সটে রূপান্তরের প্রক্রিয়া
- ডিক্রিপশন (Decryption): সাইফারটেক্সটকে প্লেইনটেক্সটে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া
- কী (Key): এনক্রিপশন ও ডিক্রিপশনের জন্য ব্যবহৃত গোপন তথ্য
শাস্ত্রীয় সাইফারের প্রকারভেদ
১. সাবস্টিটিউশন সাইফার (Substitution Cipher)
এই পদ্ধতিতে প্রতিটি অক্ষর অন্য কোনো অক্ষর দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়।
উদাহরণ:
সাধারণ বর্ণমালা: অ আ ই ঈ উ ঊ এ ঐ ও ঔ
গোপন বর্ণমালা: ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ
২. ট্রান্সপজিশন সাইফার (Transposition Cipher)
এই পদ্ধতিতে অক্ষরগুলো একই থাকে কিন্তু তাদের অবস্থান পরিবর্তন করা হয়।
উদাহরণ:
মূল বার্তা: "আমার নাম আল-আমিন"
এনক্রিপ্ট: "মরামআ নামল-আি ান"
ইতিহাসের পাতা থেকে
স্পার্টান স্কাইটেল (Spartan Scytale)
খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে গ্রিক স্পার্টানরা কাঠের রডের চারদিকে চামড়ার ফিতা পেঁচিয়ে বার্তা লিখতো। শুধুমাত্র একই মাপের রড দিয়েই বার্তা পড়া যেত।
আরবদের অবদান
৯ম শতাব্দীতে আরব বিজ্ঞানী আল-কিন্দি প্রথম ফ্রিকোয়েন্সি অ্যানালাইসিস পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এটি ছিল ক্রিপ্ট অ্যানালাইসিসের প্রথম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।
শাস্ত্রীয় সাইফারের সীমাবদ্ধতা
- ছোট কী স্পেস: খুব কম সংখ্যক সম্ভাব্য কী
- ফ্রিকোয়েন্সি অ্যানালাইসিসের ঝুঁকি: ভাষার প্রাকৃতিক প্যাটার্ন রক্ষা করতে পারে না
- কী বিতরণের সমস্যা: গোপন কী নিরাপদে পৌঁছানো কঠিন
আধুনিক প্রাসঙ্গিকতা
যদিও শাস্ত্রীয় ক্রিপ্টোগ্রাফি আজ আর ব্যবহার করা হয় না, তবুও এগুলো শেখার গুরুত্ব রয়েছে:
- ভিত্তি তৈরি: আধুনিক ক্রিপ্টোগ্রাফির মূল ধারণা বুঝতে সাহায্য করে
- ক্রিপ্ট অ্যানালাইসিস: আক্রমণের পদ্ধতি বুঝতে সাহায্য করে
- শিক্ষামূলক: সহজভাবে ক্রিপ্টোগ্রাফির নীতিমালা শেখানো যায়
পরবর্তী অধ্যায়ে আমরা বিস্তারিতভাবে সিজার সাইফার নিয়ে আলোচনা করবো।